পর্ব – ৫
সন্ধ্যায় মিলু আর অশোক বসে আছে মামাবাড়ির ছাদে তাদের প্রিয় বড় মামা প্রিয়নাথ দাশের সাথে। হাসিখুশি আড্ডা প্রিয় আর শিশুর মত সরল বড় মামা -মামা নয় যেন মিলুর সমবয়সী বন্ধু। যত বায়না সবই এই মামার কাছে। আর ভাগ্নেকে পেলে মামাও সব কিছু ভুলে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকেন। মিলুর সাথে একদিকে তার খুবই মিল আছে। প্রকৃতির মাঝে গেলে মিলুর উদাস হয়ে যান। সুযোগ পেলেই ছুটে যান মাঠ ঘন বন জঙ্গল আর নদী খালের কাছে।
মিলু বলে – মামা শুনেছি তোমাদেরও নাকি আমাদের মত অন্য জায়গায় আগে বাড়ি ছিল?
– ঠিক শুনেছিস। তোরা তো ঢাকাইয়া। আমরা কিন্তু খোদ বরিশাইল্যা। আমাদের আগেও এই বরিশালেই বাড়ি ছিল। তবে সে এক গ্রামে। তার নাম গৈলা। আমার বাবা চন্দ্রনাথ দাশ মানে তোর দাদামশায় ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হয়ে বরিশাল ব্রাক্ষ্মসমাজে যোগ দেন। সেই কারণে গ্রামের গোঁড়া হিন্দুরা একঘোরে করে দেয়। নানা অত্যাচার করতে থাকে যাতে আমরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হই। এবং তখন থেকেই পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে এই বরিশাল শহরেই বসবাস শুরু। তোর মায়ের কিন্তু এই বরিশাল শহরেই জন্ম।
মিলু চুপচাপ শুনছিল। বলল -শুনেছি মা কোলকাতায় পড়াশুনো করেছেন।
– হ্যাঁ। তবে প্রথমে কিছুদিন এখানেই পড়েছে। সে স্কুলটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তখন ওকে কোলকাতায় পাঠানো হয় পড়তে। সেখানকার বেথুন স্কুলে ফার্ষ্ট ক্লাস অবধি পড়ে, তারপরেই বিয়ে হয়ে যায়।
খাইয়েদাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন বলে কুসুমকুমারী এসে অশোককে নিয়ে গেলেন।
মিলু অন্ধকার আকাশের দিকে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে মামাকে বলল – মামা আকাশে কত তারা ফুটেছে, দেখো।
হ্যাঁ, আজ অমাবস্যার রাত তো। তাই …
মামা বললেন – ঐ যে দেখছিস, যে তারাগুলো মিটমিট করছে ওগুলো নক্ষত্র। আর যেগুলো স্থির হয়ে আলো দিচ্ছে, ওগুলো গ্রহ।
মামা ভাগ্নের গল্পের অভিমুখ পালটে গেল।
ভাল করে নিরীক্ষণ করে একটা তারা দেখিয়ে মিলু মামার কাছে জানতে চায় – ঐ যে বড় তারাটি দেখা যাচ্ছে ওটাই কি ধ্রুবতারা ?
মামা সোৎসাহে দেখে নিয়ে বললেন – ঐটা তো ? হ্যাঁ ওটাই ধ্রুবতারা।
বইয়ে গ্রহ তারা নিয়ে কিছুকিছু জানার পরেই মহাকাশ সম্পর্কে মিলুর কৌতূহল বেড়েছে। আজকে এই চাঁদহীন রাতের অন্ধকার মহাকাশের অগুনতি আলোর ফুল তার মনটাকে আরো কৌতূহলী করে তুলেছে।
প্রিয়নাথ তার প্রিয় ভাগ্নেকে আকাশের তারাদের সঙ্গে পরিচয় করাতে শুরু করলেন।
আর মিলুর কল্পনা বিলাসী মন সেই অন্ধকারের পথ ধরে যেন হারিয়ে গেল অনন্ত মহাকাশের নক্ষত্রে নক্ষত্রে।
loading...
loading...
চলতি লিখাটি অনন্য এক সৃষ্টির স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। অভিনন্দন কবি।
loading...
আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ প্রিয়জন
loading...